ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক হতে চাইলে |

ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক হতে চাইলে

মানুষের সুস্থ জীবন নিশ্চিতের পাশাপাশি বহু লোকের আয়-রোজগারের পথও করেছে ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিত্সা। হামদর্দ ল্যাবরেটরি ওয়াকফ বাংলাদেশ, ইবনে সিনাসহ অনেক প্রতিষ্ঠান চিকিত্সার সঙ্গে সঙ্গে ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক পণ্য উত্পাদন ও বিপণন করে আসছে। ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিত্সা, পণ্য উত্পাদন, বিপণনের সঙ্গে জড়িত দেশের অনেক মানুষ।

পড়ার সুযোগ আছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের অধিভুক্ত সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (বিইউএমএস) এবং ব্যাচেলর অব আয়ুর্বেদিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (বিএএমএস) কোর্স করা যায়। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি মিলে আট পয়েন্ট হলেই ভর্তির আবেদন করা যাবে সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজে। কোর্সটির পাঁচ বছর প্রাতিষ্ঠানিক ও এক বছর ইন্টার্নশিপ শেষে পাওয়া যাবে ডিগ্রি। প্রতিবছর এইচএসসির ফল প্রকাশের পর ব্যাচেলর কোর্সে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ইউনানি বিষয়ে ২৫ জন ও আয়ুর্বেদিক বিষয়ে ২৫ জন ভর্তির সুযোগ পান। এ ছাড়া সরকার স্বীকৃত বাংলাদেশ বোর্ড অব ইউনানি অ্যান্ড আয়ুর্বেদিক, সিস্টেমস অব মেডিসিন বিভাগ থেকে চার বছরমেয়াদি ডিপ্লোমা অব ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (ডিইউএমএস) এবং ডিপ্লোমা অব আয়ুর্বেদিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (ডিএএমএস) ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হওয়া যাবে। এসএসসি পাস হলেই আবেদন করা যাবে। ডিপ্লোমা কোর্সে ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ করতে হবে। কোর্স শেষে ব্যাচেলর ডিগ্রিপ্রাপ্তরা স্বাস্থ্য অধিপ্তর এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা বাংলাদেশ বোর্ড অব ইউনানি অ্যান্ড আয়ুর্বেদিক থেকে নিবন্ধিত হয়ে কাজের সুযোগ পাবেন।

কাজের সুযোগ

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনানি ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকার তিব্বিয়া হাবিবিয়া কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো. আনোয়ারুল আলম ভূইয়া জানান, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিকে ব্যাচেলর ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেওয়ার পর কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। সরকারি মেডিক্যাল অফিসার হওয়ার সুযোগ আছে। চাকরির সুযোগ আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রকল্পে। সরকারের ওষুধ অধিদপ্তরেও সুযোগ আছে। বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রকল্পে মেডিক্যাল প্রতিনিধি হিসেবেও কাজের সুযোগ রয়েছে। দেশের নামকরা ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানিগুলোও ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি করে। সেখানেও কাজের সুযোগ রয়েছে। হামদর্দ, ইবনে সিনাসহ ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানে বিপণন থেকে শুরু করে নানা বিভাগে কাজের সুযোগ রয়েছে। দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ইউনানি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে ১৬টি এবং আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে ৯টি। এসব কলেজে শিক্ষকতার সুযোগ রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে চেম্বার দিয়ে প্র্যাকটিস এবং ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধের দোকান দিয়ে বসতে পারেন।

হতে পারেন রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তার

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ব্যাচেলর ডিগ্রিপ্রাপ্ত মোট ৭২৩ জন রেজিস্টার্ড ডাক্তার রয়েছেন। এর মধ্যে ইউনানি বিষয়ে ৩৭৬ জন ও আয়ুর্বেদিক বিষয়ে ৩৪৭ জন, যাঁরা দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা বা উপজেলায় সরকারের নিবন্ধিত হেকিম হিসেবে কর্মরত। বাংলাদেশ বোর্ড অব ইউনানি অ্যান্ড আয়ুর্বেদিক জানায়, সারা দেশে ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক বিষয়ে ডিপ্লোমাধারী রেজিস্টার্ড হেকিম রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে চেম্বার দিতে চাইলে প্রথমেই ভালো লোকেশন নির্বাচন করতে হবে। ভালো মানের এবং নামকরা কম্পানির ওষুধ রাখতে পারলে সেবাগ্রহিতার সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি আয়ও বাড়বে।

সরকারি প্রকল্পে কাজের সুযোগ

ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ডিগ্রি নেওয়ার পর সরকারের অলটারনেটিভ মেডিক্যাল কেয়ার (এএমসি) প্রকল্পে মেডিক্যাল অফিসার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হোমিও ও ট্রেডিশনাল মেডিসিন বিভাগের পরিচালক ডা. মনোয়ারা সুলতানা জানান, অলটারনেটিভ মেডিক্যাল কেয়ার প্রকল্পে ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালে ৪৫ জনকে ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে শিক্ষকসহ বেশ কিছু পদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ইউনানি বিভাগে ৭০ জন এবং আয়ুর্বেদিক বিভাগে ৫৭ জনকে মেডিক্যাল অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসারদের কাজে সহায়তার জন্য সরকার এখন পর্যন্ত ৬৩ জন কম্পাউন্ডার ও হারবাল অ্যাসিস্ট্যান্ট গার্ডেনার পদে ৪৩০ জন নিয়োগ পেয়েছে। ২০২২ পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে। বাড়তে পারে এ মেয়াদ। একজন ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসার সর্বসাকল্যে ২২০০০ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া অনেককেই ধাপে ধাপে রাজস্ব খাতে স্থায়ীকরণ করেছে সরকার।

আয়-রোজগার

ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক পেশায় কর্মরত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধ্যয়ন শেষে রেজিস্টার্ড হয়ে নিজেই প্র্যাকটিস করলে প্রথমে আয়টা একটু কম হলেও সেবা ও সুনাম বাড়তে থাকলে বাড়বে আয়ের পরিমাণও। শুরুর দিকে একজন মাসে স্থানভেদে ২০ হাজারের অধিক আয় করতে পারবে। সরকারি চাকরিতেও ভালো বেতন-ভাতা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানিতেও শুরুর দিকে ২০-২৫ হাজার টাকা পাওয়া যেতে পারে। অভিজ্ঞতার সঙ্গে বাড়বে বেতন ও অন্যান্য সুবিধাও।

%d bloggers like this: